প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২২ ১১:১৫

অর্থ আত্মসাৎ: শাহবাগ থানা হাজতে নর্থ সাউথের চার ট্রাস্টি

অনলাইন ডেস্ক
অর্থ আত্মসাৎ: শাহবাগ থানা হাজতে নর্থ সাউথের চার ট্রাস্টি

ক্যাম্পাসের জন্য জমি কেনা সংক্রান্ত অর্থ আত্মসাতের মামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যকে শাহবাগ থানা হাজতে নেওয়া হয়েছে। রোববার (২৩ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাদের শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।

আসামিরা হলেন- রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ। এর আগে আগাম জামিন আবেদন খারিজ করে তাদেরকে পুলিশে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওসি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, আসামিদের থানা হাজতে রাখা হয়েছে। রাতে তারা থানায় থাকবেন। সোমবার (২৩ মে) আসামিদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করা হবে।’

এর আগে দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের আগাম জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে তা খারিজ করে দেন।

একই সঙ্গে তাদের শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরে নির্দেশ দেন। এছাড়া আসামিদের হেফাজতে পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শাহবাগ থানা পুলিশকে তাদের বিচারিক আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

আদালতে এদিন আসামিপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলী। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

আদালত আদেশে বলেন, আবেদনকারী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় আবেদনকারী অভিযুক্তরা আগাম জামিন পেতে পারেন না।

তাছাড়া আগাম জামিন পাওয়ার মতো যৌক্তিক, গ্রহণযোগ্য কারণ তারা আদালতকে দেখাতে পারেননি। যে কারণে আগাম জামিনের আবেদন সরাসরি খারিজ করে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হলো।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হলো, হেফাজতে পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন আসামিদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করা হয়।

শুনানিতে আইনজীবী মিজান সাঈদ জামিন আবেদনকারীদের পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যবসায়িক পরিচয় তুলে ধরে বলেন, এই আবেদনকারীরা প্রত্যেকে এদেশের নাগরিক। তারা সবাই বয়স্ক। তার মধ্যে একজন নারীও আছেন। নিজেদের টাকায় তারা এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুদক অনুমানের ভিত্তিতে মামলা করেছে। এই মামলায় তারা হয়রানির শিকার হলে অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে। যে কারণে তারা আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন। জামিন পেলে তারা পালিয়ে যাবেন না।

শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, বর্তমানকালে অর্থপাচার এবং দুর্নীতি হত্যার চেয়েও বিপজ্জনক অপরাধ। হত্যা একটা পরিবারকে ধ্বংস করে মাত্র। অর্থপাচার বা দুর্নীতি দেশ-সমাজকে ধ্বংস করে।

জামিনের বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী শুনানিতে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাশ কাটিয়ে, টেন্ডার (দরপত্র) না করে অতিরিক্ত দাম দিয়ে জমি কিনেছেন। একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে তারা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। তাছাড়া আসামিদের জামিন আবেদনে কোথাও তারা বলেননি, দুদক তাদের হয়রানি করছে বা করতে পারে। জামিনের অপব্যবহার করে তাদের দেশের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সুতরাং তাদের জামিন আবেদন খারিজ করে তাদের কাস্টডিতে দেওয়া হোক।

জামিন আবেদনকারী ট্রাস্টি মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতির ঘটনায় মামলা হয়েছে জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেন, এ মামলার বিরুদ্ধে রিট মামলা করে আদেশ নিয়ে তিনি দেশের বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গিয়ে হাইকোর্টের সে আদেশে স্থগিতাদেশ নেয়। ওই মামলায় তিনি এখন জামিনে আছেন। সুতরাং তাদের জামিন দেওয়া হলে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন। তাছাড়া আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অর্থপাচার গুরুতর অভিযোগ। এসব বিবেচনায় জামিন আবেদন খারিজ করা হোক।

আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাস্টি হলেন যাকে ট্রাস্ট করা হয়। একজন ট্রাস্টি হিসেবে যদি সেই ট্রাস্ট ভঙ্গ করেন তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এই চার আসামি ট্রাস্টের টাকার সদ্ব্যবহার করেননি। নিজের স্বার্থে টাকা ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই না, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি কিনেছেন অতিরিক্ত দাম দিয়ে। বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। আপিল বিভাগের নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অর্থ আত্মসাৎ বা দুর্নীতি গুরুতর অপরাধ। আর অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় হাইকোর্ট তাদের জামিন আবেদন খারিজ করেছেন বলে মনে করি।

গত ৫ মে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থাৎ সরকারের সুপারিশ বা অনুমোদনকে পাশ কাটিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কতিপয় সদস্যের অনুমোদন বা সম্মতির নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমি কেনা বাবদ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তারা ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ২৩ হাজার ৪৯৭ টাকা অতিরিক্ত অর্থ অপরাধজনকভাবে দেওয়া-নেওয়া করে অর্থ স্থানান্তর করে মানি লন্ডারিং করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ডের চার সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন 

উপরে