প্রকাশিত : ২ জুন, ২০২২ ১১:৪২

নিবন্ধনহীন হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক বন্ধ করে দেয়া হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক
নিবন্ধনহীন হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক বন্ধ করে দেয়া হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে প্রায় ১১ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। অনেকগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই, সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। যারা মানসম্মত সেবা দিতে পারছে না, তাদের সতর্ক করা হবে। কাউকে সময় বেঁধে দেয়া হবে। স্বাস্থ্যখাতে স্বচ্ছতা আনার জন্য, মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করার জন্য এসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এরপরও মানহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় ১১ হাজার ডায়াগনস্টিক সেন্টার কাজ করছে। এর মধ্যে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদের কারণে যাতে সাধারণ মানুষ প্রতারিত না হয় সেদিকে আমরা নজর দিচ্ছি।

গতকাল জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস ২০২২ পালন উপলক্ষ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন তিনি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২ মে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হিসেবে জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অধিদফতর। চলতি বছর ২ মে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি ছিল। তাই সেদিন দিবসটি পালন করা সম্ভব হয়নি। তাই এদিন দিবসটি পালন করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। এ ছাড়া ৬৪ জেলার সিভিল সার্জন ও সব উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরপর আমাদের হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংখ্যা ছিল পাঁচ থেকে ছয় হাজার। এখন শয্যাসংখ্যা ৬০ হাজারের বেশি। স্বাধীনতার সময় আমাদের মেডিকেল কলেজ ছিল আটটি। এখন ১১০টি। বর্তমানে ২০টির মতো ইনস্টিটিউট আছে। আগে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। এখন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচটি। একই সঙ্গে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক, পরিবার পরিকল্পনা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভূমিকা অনেক বেশি। প্রতিটি উপজেলায় এখন ৫০টি শয্যা রয়েছে। এসব সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতা অর্জনের কারণে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মানহীন ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। আমরা কাউকে হেনস্তা করতে চাচ্ছি না। যারা ভালো করছেন তাদের সহযোগিতা করবো। কিন্তু যারা অন্যায় করবেন আমরা তাদের সঙ্গে নেই। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবা শুধুমাত্র সরকারিতেই থাকে না, প্রায় অর্ধেক জনগণ সেবা নেন বেসরকারিতে। কোভিড মোকাবিলায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোও অনেক ভূমিকা রেখেছে।
করোনা নিয়ন্ত্রণ ও টিকাদানের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে মন্তব্য করে জাহিদ মালেক বলেন, দেশের প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। তবে এখনো আট থেকে ১০ কোটি মানুষ বুস্টার ডোজের বাইরে। আগামী ৪ জুন থেকে বুস্টার ডোজের ক্যাম্পেইন শুরু হবে। বুস্টার ডোজ নিয়ে আমরা আরও সুরক্ষিত থাকবো।

করোনার সময়ে অসংক্রামক রোগ নিয়ে কাজ করতে পারিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন অসংক্রামক রোগ নিগে কাজ করছি। অ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। দেশে অসংক্রামক রোগে ৬৭ ভাগের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। তাই এটাতে গুরুত্ব দিতে হবে।

বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবায় জনবল অনেক বেড়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে তিন লাখ জনবল নিয়ে কাজ করছে। জনবল বৃদ্ধি করে আমরা সেবার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। অনেক হাসপাতাল এখন ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় এসেছে। আগামীতে সব হাসপাতালকেই এর আওতায় আনতে হবে। সফলতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করেছি। স্বাস্থ্য অধিদফতরে সক্ষমতায় বিশ্বে করোনা মোকাবিলায় আমরা পঞ্চম ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম হয়েছি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর মহাপরিচালক প্রফেসর আবুল বাসার মো. খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর ডা. আহমেদুল কবীর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রশাসন প্রফেসর ডা. শামিউল ইসলাম প্রমুখ।
এদিকে দেশে আরও ১৮৫টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। চলমান এ অভিযানে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩৩৪টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার এক বিজ্ঞপ্তিতে গত মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে মঙ্গলবার কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়নি। তবে চট্টগ্রামে ২২টি, রাজশাহীতে ৫৮টি, রংপুরে ৪৯টি, ময়মনসিংহে ২৬টি, সিলেটে ৩৫টি ও খুলনায় ৮টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে।
এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সারাদেশে এক হাজার ৩৩৪টি অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করা হয়েছে। ঢাকার বাহিরে খুলনায় সর্বোচ্চ ৩১১টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন 

উপরে