প্রকাশিত : ৮ জুন, ২০২২ ১১:১৫

পরিবেশ অশান্ত করলে ‘আম-ছালা’ দুটোই যাবে : প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক
পরিবেশ অশান্ত করলে ‘আম-ছালা’ দুটোই যাবে : প্রধানমন্ত্রী

পরিবেশ অশান্ত করলে ‘আম-ছালা’ দুটোই যাবে: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনা করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর আন্দোলন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরিবেশ অশান্ত করলে আমও যাবে, ছালাও যাবে। তখন আর বেতন বাড়বে না। বেতনহীন হয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বেতন বাড়ানোর আন্দোলন যদি করতে যায়, এই রপ্তানি যদি বন্ধ হয়- গার্মেন্টসসহ সব কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমও যাবে, ছালাও যাবে। বেতন আর বাড়বে না। চাকরিই চলে যাবে। যখন ঘরে ফিরে যেতে হবে, তখন কী করবেন?

গতকাল ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ সব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী । তিনি গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এই সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দেন। উসকানি দাতাদের বিষয়ে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে নেতারা উসকানি দিচ্ছেন তারা কাদের প্ররোচনায় উসকানি দিচ্ছেন সেটাও একটু ভেবে দেখতে হবে। সরকার প্রধান বলেন, বেসরকারি খাতে আমরা কত দেবো! আমরা তো ভর্তুকি দিয়েই যাচ্ছি। সব ধরনের প্রণোদনা দিয়েছি। এর বেশি দেওয়া সম্ভব নয়। সেটা মাথায় রেখে চলতে হবে। নেতাদের তো কোনো অসুবিধা নেই, তারা যেখান থেকে উসকানি পাচ্ছেন সেখান থেকে ভালো অংকের টাকা পাবেন। কিন্তু শ্রমিকদের ভাগ্যে কী হবে? এদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে ক্ষতিই তো করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে যে দেশে আমরা পণ্য রপ্তানি করি তাদের ক্রয়ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাচ্ছে এবং দিনে দিনে আরও খারাপ হচ্ছে। আমরা আমেরিকায়-ইউরোপে পণ্য পাঠাই, সব জায়গায় জিনিসের দাম বেড়েছে। সেখানে মানুষ কত দুরাবস্থায় আছে, কত মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সেই তুলনায় বাংলাদেশে এখনও আমরা অন্ততপক্ষে সবার খাদ্য, ওষুধ দিয়ে যেতে পারছি। যদি কেউ কোনো রকম অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে যায় তাহলে আমি বলবো শেষে এ-কূল, ও-কূল দুকূল সব হারাতে হবে। এটা যেন মনে থাকে।

মন্দা মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনার সময় আমরা কারখানা বন্ধ হতে দিইনি। চালু রাখার সব সুযোগ করে দিয়েছিলাম। এখন সুবিধা পাচ্ছি- রপ্তানি বাড়ছে আমাদের। আমাদের ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আসছে। বিনিয়োগের সুযোগ আসছে। আমরা সেগুলো কাজে লাগাচ্ছি। কারো কথায় অশান্তি সৃষ্টি করলে দেশের ক্ষতি, নিজেরও ক্ষতি।

ছয় দফা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর উত্থাপিত ৬ দফা দাবি ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক দলিল ‘ম্যাগনা কার্টা’। এটি দেশের স্বাধীনতার জন্য জনগণকে প্রস্তুত করেছিল। ছয় দফা দাবি ছিল দেশের স্বাধীনতার জন্য জনগণকে পুরোপুরি প্রস্তুত করা এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পক্ষে জনগণকে প্রস্তুত করা। শেখ হাসিনা বলেন, প্রকৃতপক্ষে, এটি ছিল ‘ম্যাগনা কার্টা’ যার মাধ্যমে দেশের মানুষ নিজেদের স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, পরবর্তীতে ছয় দফা এক দফায় পরিণত হয় এবং এক দফার পথ ধরেই আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করি। আর ১৯৭০ এর নির্বাচন ও এই ৬ দফার ভিত্তিতেই হয়।
তিনি বলেন, এই ৬ দফা ছিল মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করায় ‘ম্যাগনা কার্টা’ ছিল এই ৬ দফা। যার মধ্য দিয়ে মানুষ সেভাবে তৈরি হয়েছিল। সেখান থেকেই আমরা এক দফায় চলে এসে স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং ৬ দফা কিন্তু মনু মিয়াদের রক্ত দিয়েই রক্তের অক্ষরে লিখে দেয়া হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, এই ৬ দফা মূলত এক দফাই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। যেটা জাতির পিতা ইশারায় দেখাতেন এক হাতের পাঞ্জা এবং আর এক হাতের তর্জনি প্রদর্শন করে এবং আবার তর্জনির ওপর জোর দিতেন অর্থাৎ আসলে এক দফা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ় বিশ্বাস ও আস্থা ছিল যা প্রকৃতপক্ষে তাঁর সাহস, সততা, বিশ্বাস ও দূরদর্শিতা থেকে এসেছে এবং সে কারণেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
বঙ্গবন্ধু নিজেই ৬ দফা দাবি প্রণয়ন করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আলফা ইন্স্যুরেন্সের চাকরি জীবনে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তৎকালীন ব্যক্তিগত সহকারি পরবর্তীতে ঢাকার নির্বাচিত প্রথম মেয়র মোহাম্মদ হানিফ টাইপরাইটার মেশিনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর উল্লেখ করা পয়েন্ট গুলো টাইপ করে গিয়েছেন। সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

গণভবন থেকে সভা সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। অনুষ্ঠানের শুরুতে ছয় দফা দাবি আদায়ে, ’৭৫ এর ১৫ আগষ্টের শহিদ এবং অন্যান্য গণ আন্দোলনের শহিদসহ সীতাকুন্ড কন্টেইনার ডিপোর অগ্নিকান্ডে নিহতদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।
একটাও মাস্ক পরেনি, সব কয়টার জরিমানা হবে : অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত অনেক নেতাকর্মীই মাস্ক পরা ছিলেন না। বক্তব্য দেওয়ার সময় বিষয়টি খেয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী। যারা মাস্ক পরেনি, তাদের তিনি হাসতে হাসতে জরিমানা করার কথাও বলেন।

সভায় দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাগত বক্তব্য দেন। পরে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আওয়ামী লীগের শ্রম ও কর্মসংস্থান সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলেন সঞ্চালক ও প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। কিন্তু তারা বলেন, ছয় দফা দিবসের ইতিহাস দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাই ভালো জানেন। তাই তারা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে ইতিহাস জানতে চান। পরে দলীয় সভাপতি তার বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ছয় দফার ইতিহাসসহ সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য নিয়ে কথা বলেন। বক্তব্য শেষের সময় প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রান্তে থাকা নেতাদের অনেকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।
এ সময় শেখ হাসিনা তাদের উদ্দেশে হাসতে হাসতে বলেন, একটাও মাস্ক পরে নাই। যেগুলো মাস্ক পরে নাই, সব কয়টার জরিমানা করা হবে। দলীয় সভাপতির এমন বক্তব্য শুনে অনেক নেতাকেই তড়িঘড়ি মাস্ক পরতে দেখা যায়।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন 

উপরে