প্রকাশিত : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৫:১০

আমি অনেক কিছু জানি, বলতে পারবো না: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক
আমি অনেক কিছু জানি, বলতে পারবো না: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার চক্রান্তের পেছনের অনেক কিছু জানলেও তা বলতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজে নীলকণ্ঠ হয়ে বেঁচে আছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অনেক কিছু জানি, বলতে পারবো না, বলি না। আমার একটাই লক্ষ্য, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। এটা যখন স্বার্থকভাবে করতে পারবো, তখনই আমার অনেককিছু বলার সুযোগ আসবে।

বুধবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় সংসদে ১৪৭ বিধির ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর আনা প্রস্তাবটি পরে সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ২৪ জন সংসদ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। মোকতাদির চৌধুরীর প্রস্তাবটি ছিল- ‘এই মহান সংসদের অভিমত এই যে, ঘৃণ্য খুনিচক্র ও চক্রান্তকারী গোষ্ঠী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা জানাচ্ছি। কিন্তু চক্রান্তকারীদের প্রেতাত্মারা এখনো ক্ষান্ত হয়নি। আজও তারা ঘৃণ্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে এসে ইতিহাসের চাকাকে ঘুরিয়ে দিতে। তাদের এই ঘৃণ্য চক্রান্তকে সফল হতে দেয়া যাওয় না। ইতিহাসের পাদদেশে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা, বাঙালির মহত্তম ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব শহীদকে বিনম্র চিত্তে ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি এবং বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেওয়ার শপথ গ্রহণ করছি, ২০২২ এর আগস্ট মাসে একাদশ জাতীয় সংসদের উনবিংশতম অধিবেশনে এই হোক প্রত্যয় দৃঢ় ঘোষণা।’

পরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সরাসরি হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার হয়েছে। অনেকের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এই চক্রান্তটা তো শুধু হত্যাকাণ্ড নয়। চক্রান্তটি আমাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এই চক্রান্ত আমার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। এ চক্রান্ত আমাদের আদর্শের বিরুদ্ধে। এই চক্রান্তের পেছনে কারা, বোধহয় সেটাও খুঁজে বের করার সময় এসেছে। এ হত্যার চক্রান্তকারীদের বের করে জাতির সামনে তাদের চেহারা উন্মুক্ত করা দরকার। আমরা শেষ করে যেতে পারবো কি না। মনে করি একদিন না একদিন সেটা নিশ্চয়ই বের হবে। একদিন না একদিন নিশ্চয়ই প্রকাশ হবে। অবশ্যই এটা জাতিরও জানা দরকার। প্রজন্মের পর প্রজন্মের জানা দরকার। যে চক্রান্তটি আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করে দিচ্ছিল। রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছিল। নিশ্চয়ই সেটা জাতিকে জানতে হবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এই খুনের সঙ্গে কারা জড়িত সেটা তো স্পষ্ট। তবে হ্যাঁ, জানি অনেক কিছুই কিন্তু... আমি তো বলেছি, সব ব্যাথা, সবকিছু ধারণ করেই যত শোক, সব বুকে নিয়েই আমার পথচলা। আমি তো নীলকণ্ঠ হয়ে বেঁচে আছি। আমি অনেক কিছু জানি, বলতে পারবো না, বলি না। কারণ আমার একটাই লক্ষ্য দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। এটা স্বার্থকভাবে যখন করতে পারবো, তখনই আমার অনেক কিছু বলার সুযোগ আসবে।

দেশের মানুষের জন্য কাজ করার তাগাদা থেকেই ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে এসেছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাপ, মা, ভাই সব হারিয়ে কোথায় থাকবো জানি না। কোনো চিন্তা করি নাই। আমার মনের ভেতরে একটা তাগাদা ছিল, আমাকে ফিরতে হবে দেশে। আমাকে কিছু করতে হবে এই দেশের মানুষের জন্য। অন্যায়-অবিচার দূর করতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে হবে। একদিকে খুনিদের বিচার, অপরদিকে শোষিত-বঞ্চিত মানুষগুলোর জন্য আমার পিতার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে।

যাত্রাপথ সহজ ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বারবার আঘাত, মৃত্যুর মুখোমুখি। আল্লাহ আমাকে এই শক্তি দিয়েছিল, আমার কোনো ভয় ছিল না। একটা আত্মবিশ্বাস ছিল মরতে তো একদিন হবেই। মরার আগে মরতে রাজি ছিলাম না। আমার সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। ২০০৯ সাল থেকে পর পর তিনবার ক্ষমতায় থাকার ফলে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।

সরকারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করার অভিযোগ তুলে সরকার প্রধান বলেন, দুর্ভাগ্য যতই কাজ করি- কিছু লোক তো আছেই পেছনে লেগে। তারা কিছুতেই ভালো দেখে না। একটা মিথ্যা অপপ্রচার চালাবেই তারা। যেখানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বার বার বলছে, না বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে নেই, সেখানে আমাদের দেশের কিছু মানুষ অপপ্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ যেখানে সারাবিশ্বের কাছে সম্মান পাচ্ছে, সেখানে আমাদের ভেতরের কিছু লোক বাংলাদেশকে অসম্মান করার জন্য মিথ্যা অপপ্রচার করে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী ১৫ আগস্টের পেতাত্মারা যেন সক্রিয়।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আত্মস্বীকৃত খুনিদের মধ্যে যারা দেশে ছিল, বিচার করেছি। আমরা তিনজনকে দেশের বাইরে থেকে আনতে পেরেছি। কর্নেল নুর কানাডায়, রাশেদ চৌধুরী আমেরিকায়, রশিদ লিবিয়ায়, পাকিস্তানেও থাকে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরা আমাদের মানবাধিকারের কথা শোনায়। আর খুনিদের লালন-পালন করে। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। তবে এ ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে।

জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছি। আমি কারো বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নিতে যাইনি। আমি বিচারে বিশ্বাস করি। বিচারের মধ্যদিয়েই চলেছি। আমার ইচ্ছা প্রতিশোধ নেওয়া নয়, দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবো। আমার বাবাকে হত্যা করে যে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে, সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করা; তাদের সুন্দর জীবন দেওয়া; এটাই আমার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। পরপর তিনবার ক্ষমতায় থাকার পর অন্তত কিছু কাজ করতে পেরেছি। এর সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে সেই ব্যবস্থাটা করার সুযোগ পেয়েছি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম, পারতাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের দুই বছরের ক্ষতি। তারপর এখন ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। এটাই আমাদের বাধা দিচ্ছে। জানি না এ যুদ্ধ কবে শেষ হবে।

  দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে