প্রকাশিত : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৬:৪৯

আকবর আলি খানের বর্ণাঢ্য জীবন

অনলাইন ডেস্ক
আকবর আলি খানের বর্ণাঢ্য জীবন

চলে গেলেন দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান (৭৮)। কর্মমুখর জীবনকে বিদায় জানিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জন্মগ্রহণ করেন আকবর আলি খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি) যোগ দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করেন আকবর আলি খান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন হবিগঞ্জের মহুকুমা প্রশাসক বা এসডিও। সেসময় সক্রিয়ভাবে মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে কাজ করলে তার বিচার করে পাকিস্তান সামরিক সরকার। তারই অনুপস্থিতিতে দেওয়া হয় ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড।

তবে সেই চোখরাঙানিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মুজিবনগর সরকারের সঙ্গেই কাজ করে যেতে থাকেন তিনি। ওই সময় তাকে প্রবাসী সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সরকারি চাকরির পাশাপাশি আকবর আলি খান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি বাংলাদেশ জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তিন বছর উন্নয়ন অর্থনীতি ও উন্নয়ন প্রশাসন বিষয়েও পাঠদান করেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যুক্ত হন এই অর্থনীতিবিদ।

আমলা হিসেবে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ, শিক্ষাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। আকবর আলি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানও ছিলেন। ২০০১ সালে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব হন এবং ২০০২ সালে এ পদ থেকে অবসরে যান। ২০০৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থ, পরিকল্পনা, বাণিজ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন আকবর আলি খান। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা দেখিয়ে কয়েক মাস পরেই ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি রেগুলেটরি রিফমর্স কমিশনের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে বাস্তবায়িত অনেক কর্মসূচিতে কাজ করেছেন আকবর আলি খান। তিনি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত আরডি-১ প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে। অর্থ সচিব থাকাকালে তিনি গরিবদের জন্য ঘর নির্মাণে ‘গৃহায়ন তহবিল’ এবং ‘কর্মসংস্থান ব্যাংক’ গড়তে অনন্য ভূমিকা রাখেন। তিনি দুই বছর সামাজিক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন।

১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে ইকোনমিক মিনিস্টার পদে দায়িত্ব পালন করেন এই অর্থনীতিবিদ। বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি তিন বছর বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিসরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন আকবর আলি খান।

অর্থনীতি, ইতিহাস, জনপ্রশাসন, সাহিত্য ও পানিসম্পদ বিষয়ে তিনি ১৪টিরও বেশি বই রচনা করেছেন, লিখেছেন অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ। অর্থনীতি বিষয়ে ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ এবং ‘আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি’ নামে তার দুটি বই ব্যাপক জনপ্রিয়। এছাড়া তার রচনার মধ্যে রয়েছে অবাক বাংলাদেশ: বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি, বাংলায় ইসলাম প্রচারে সাফল্য: একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ, দুর্ভাবনা ও ভাবনা: রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ইত্যাদি।

তিনি আমেরিকান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিলেন এবং আজীবন সদস্য ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের।

জনপ্রশাসনে অনস্বীকার্য ভূমিকার জন্য তিনি মওলানা আকরম খাঁ পদক এবং অর্থনৈতিক গবেষণার জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। এছাড়াও আরও বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন এই অর্থনীতিবিদ।

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে