প্রশ্নফাঁস: বিমান বাংলাদেশের ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রেপ্তার

নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। এই ঘটনায় জড়িত আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন- এমটি অপারেটর মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), মোহাম্মদ মাহফুজ আলম ভূঁইয়া (৩১), মো. এনামুল হক (২৭), অফিস সহায়ক আওলাদ হোসেন (২৯) ও হারুনুর রশিদ (৪০)। তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে মাস্টার রুলে কর্মরত।
শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিমানবন্দরের কাওলা এলাকায় ডিবি লালবার ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ফাঁসকৃত প্রশ্নের সফট/হার্ডকপি, মোবাইল ফোন, নগদ দেড় লাখ টাকা, ব্যাংকের চেক, স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরিত দলিল, হিসাব নিকাশের ৪টি ডায়েরি, বিভিন্ন প্রার্থীর এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে চারটা পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগের এমসিকিউ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে বা তার আগে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে এমন আশঙ্কায় অপরাধীদেরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে মাঠে নামেন গোয়েন্দারা। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাতেই ১০০ টি প্রশ্ন সম্বলিত প্রশ্নপত্র পেয়ে যান তারা। পরে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন মর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজে নিয়োজিত গ্রেপ্তার পাঁচজন এবং শনাক্তকৃত আরও কয়েকজন নিয়োগ বিজ্ঞাপনের সাথে সাথেই ছক করতে থাকে কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস করবে, কিভাবে তা বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করবে, কোন চ্যানেলে টাকা সংগ্রহ করবে এবং কিভাবে তা বন্টন করবে ইত্যাদি বিষয়ে।
প্রশ্ন প্রণয়ন, প্রিন্টিং এবং তা সংরক্ষণ কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে থাকা আসামিরা প্রশ্নের হুবহু কপি সংগ্রহ করে সরাসরি অথবা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে। নির্দিষ্ট চাকরি প্রার্থীদেরকে বিপুল টাকার বিনিময়ে প্রশ্নের সমাধান মুখস্ত করিয়ে তাদের চাকরি প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে। প্রশ্ন ফাঁস দেয়া এবং প্রশ্নপত্র দিয়ে উত্তরপত্র মুখস্ত করানো বাবদ ভিন্ন ভিন্ন অংকের টাকা গ্রহণ করে এই চক্রটি।
গ্রেপ্তরকৃতদের সহস্তে লিখিত ডায়েরি থেকে লাখ লাখ টাকা গ্রহণ এবং তা লিখিতভাবে বন্টনের একাধিক প্রমান পাওয়া গেছে।
হারুন অর রশীদ বলেন, জাতীয় পতাকাবাহি অতি সংবেদনশীল গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থাটিতে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নগদ লাখ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ও টাকা হাতিয়েছে চক্রটি। দরিদ্র চাকরিপ্রার্থীদেরকে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে চাকরি নিশ্চিত করার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে জায়গা জমি ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত নিতো।
প্রথম দিকে সাত লাখ টাকায় ও পরে সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকায়ও প্রশ্ন বিক্রি করা শুরু করে গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যরা। নানা প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তারকৃতরা ইতোপূর্বেও প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নিয়োগ অনিয়মের কাজ করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রেই জিএম, ডিজিএমদের সমন্বয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্রিন্ট, সংরক্ষণ, পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া এবং পরীক্ষা কন্ডাক্ট করে দেয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়। এই কমিটি প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করা হয়। কিভাবে কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢালাওভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলো তার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রয়োজনে পরীক্ষা কমিটির সদস্যদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন