অর্থ আত্মসাৎ: ওয়ান ব্যাংকের ৯ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ

পরস্পর যোগসাজশে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে চার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির হিসাবসহ অন্যান্য ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় সাড়ে ১১ কোটি আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ১২ আসামির মধ্যে ওয়ান ব্যাংকের ৯ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ মামলার বাকি তিন আসামির মধ্যে একজন কারাগারে ও দুইজন জামিনে আছেন।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) ব্যাংকটির গুলশান শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার এমরান হোসেনের জামিন আবেদন খারিজ করে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্র পক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলী। আর দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও অ্যাডভোকেট চৌধুরী নাসিমা। আর আসামি পক্ষের শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. আব্দুর রাজ্জাক রাজু।
দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, “ওয়ান ব্যাংকের কর্মকর্তারা এখনো গ্রেফতার হয়নি। তারা কেন গ্রেফতার হননি, তা জানতে চেয়েছেন আদালত। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে গ্রেফতার করতে নির্দেশ ‘(ডাইরেকশন)’ দিয়েছেন হাইকোর্ট।”
যদিও হাইকোর্টে দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট চৌধুরী নাসিমা এ মামলা পরিচালনা করেছেন বলে জানান খুরশীদ। তবে সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে আদালতে তিনি (মো. খুরশীদ আলম খান) তখন আদালত উপস্থিত ছিলেন।
এ আদেশের বিষয়ে চৌধুরী নাসিমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলাটি জামিনের জন্য ছিল। যারা এখনো গ্রেফতার হয়নি বা আত্মসমর্পণ করেনি- তাদের বিষয়ে এক মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’
প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে চারটি বিমা কোম্পানির প্রায় সাড়ে ১১ কোটি আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ওয়ান ব্যাংকের সাত কর্মকর্তাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
আসামিরা হলেন— ওয়ান ব্যাংকের ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শফিউল আলম, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট বিমলেন্দু চৌধুরী, অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড রিলেশনশিপ ম্যানেজার মুনতাসির রহমান সিদ্দিকী, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল আদিল, জুনিয়র অফিসার মো. শামিম।
এছাড়া ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আবু কালাম মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন, প্রিন্সিপাল অফিসার মো. এমরান হোসেন ওরফে মোহাম্মদ এমরান হোসেন, ব্যাংকের গ্রাহক আজিজুর রহমান, রাকিবা জাহান, তানভীর হোসেন, পেশোয়ারা বেগম ও সুবু তারা হাওলাদারের নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।
দুদকের এ মামলায় ওয়ান ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার এমরান হোসেন ৩ জানুয়ারি জামিন চাইতে হাইকোর্টে আসেন। তখন তাকে জামিন না দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন হাইকোর্ট। পরে কারাগারে থেকে জামিন আবেদন করলে হাইকোর্ট রুল দেয়। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সেই রুলের শুনানি হয়।
এমরানের আইনজীবী মো. আব্দুর রাজ্জাক রাজু জানান, ‘এমরান হোসেনকে আদালত পুলিশে দিয়ে দিলেও পরে আর কোনো আসামিকে ধরা যায়নি। আইনে বলা আছে— চার মাসের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করতে হবে। তদন্তকাজও শেষ হচ্ছে না। আসামিকে জামিনও দেওয়া হচ্ছে না। পরে জামিন আবেদন করলে আদালত জামিনের রুল জারির আদেশ দেয়। আজ ‘ফাইনাল’ শুনানিতে আমরা কথা বলি।
‘এজাহারে উল্লেখ করা বাকি আসামিদের মধ্যে দুইজন জামিনে আছেন। বাকি ৯ জন পলাতক। তাদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। মামলার তদন্তকাজও শেষ করতে পারেনি। এটা তদন্তকারী কর্মকর্তার গাফিলতি। এ যুক্তি দেওয়ার পর দুদকে নির্দেশনা দিয়েছে— আগামী ৩০ দিনের মধ্যে গ্রেফতারের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে।’
২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে চারটি বীমা কোম্পানির প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ওয়ান ব্যাংকের সাত কর্মকর্তাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাদী কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা ২০১৯ সালের ৫ মার্চ থেকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ‘পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে চারটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির আলাদা হিসাবসহ অন্যান্য ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ওয়ান ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে ‘অবৈধভাবে’ ১১ কোটি ৪০ লাখ ২৩ হাজার ৯২১ টাকা স্থানান্তর করেন। পরে ওই অর্থ বিভিন্ন কৌশলে উত্তোলন করে ‘আত্মসাৎ ও পাচার’ করেন আসামিরা।
চার বিমা কোম্পানি হলো- পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, প্রেস ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ও সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন