প্রকাশিত : ৭ মার্চ, ২০২৩ ১১:৪৫

স্বল্প সময়ে ন্যায়বিচার দেওয়া সবার দায়িত্ব: প্রধান বিচারপতি

অনলাইন ডেস্ক
স্বল্প সময়ে ন্যায়বিচার দেওয়া সবার দায়িত্ব: প্রধান বিচারপতি

স্বল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে মানুষকে ন্যায়বিচার দেওয়া বিচারক, বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তা, আইনজীবী, আইনজীবী সহকারীসহ সবার জাতীয় দায়িত্ব বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সোমবার (৬ মার্চ) বিকেলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির আয়োজনে জিল্লুর রহমান অডিটোরিয়ামে শুভ বিজয়া, শুভ বৌদ্ধ পূর্ণিমা, শুভ বড় দিন পুনর্মিলনী ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ এবং স্বাধীন ও সব প্রভাবমুক্ত এবং সততা যাচাইয়ের কষ্টিপাথরে একশ পার্সেন্ট নম্বর দিয়ে উত্তীর্ণ বিচার বিভাগের স্বপ্ন নিয়ে আইনজীবী ভাই ও বোনেরা এবং বিচারক ও বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের বলি আসুন আমরা কঠোর পরিশ্রম করি। পরিশ্রম করে ১৯৭১ সালে যে ৩০ লাখ লোক রক্ত দিয়েছে এবং দুই লাখ মা বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করি এবং একাত্তরের ঋণ পরিশোধ করি।

তিনি বলেন, বিচারক, বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তা, আইনজীবী, আইনজীবী সহকারীসহ সবার জাতীয় দায়িত্ব হলো বিচার বিভাগকে গতিশীল করা ও স্বল্প সময়ে এবং স্বল্প খরচে মানুষকে ন্যায়বিচার দেওয়া।

আইনজীবীদের আদালতকে সহায়তা করতে ও সহনশীল হতে আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা প্রতিটা পদক্ষেপে কোর্টকে সহায়তা করবেন। আপনাদের সহায়তা ছাড়া কোর্টের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব না। আপনারা অসহনশীল হবেন না। অসহনশীল হলে বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষমতার ভারসাম্য থাকে না, আল্টিমেটলি রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা কোনোভাবেই এ রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেবো না। আমরা একাত্তরের চেতনায় রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাবো, এগিয়ে নিয়ে যাবো বিচার ব্যবস্থাকে। যেই বিচার ব্যবস্থায় বিচারালয়ে যারা মাসের পর মাস বছরের পর বছর ঘুরে ন্যায়বিচারের জন্য তাদের বিচার যেন নিশ্চিত হয়।

সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ মাটি, এ জনগণ, সার্বভৌমত্ব ও সরকার নিয়ে এ রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্র আমাদের সবার কুলি, মজুর, মেথরসহ অতি সাধারণ কৃষক কিংবা পথের ধারে বসে থাকা জুতা সেলাই করা মুচিরও। এ অতি সাধারণ মানুষগুলো রাষ্ট্রযন্ত্রের ক্ষতি করে না, করে না দুর্নীতি, করে না মাদক কারবার আর মানি লন্ডারিং। নেই দেশেপ্রেমের বিন্দুমাত্র ঘাটতি। আমাদের সবার এদের মতো হতে হবে। আমরা কেউ দুর্নীতিবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, মানি লন্ডারদের পাশে দাঁড়াবো না। দুর্নীতি ঘৃণা করবো, মাদককে ঘৃণা করবো, মানি লন্ডারদের ঘৃণা করবো। যারা এগুলো করে আমার মনে হয় এদের মনে বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম নেই।

ধর্মীয় উগ্রবাদের সমালোচনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এখন ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদ এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিশেষত এ উপমহাদেশে এর বিস্তার আমাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সবার আগে আমরা মানুষ, সবাই আমরা এক স্রষ্টার সৃষ্টি। এ বোধ জাগ্রত না হলে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা প্রতিকার সুদূর পরাহত থেকে যাবে।

পবিত্র কোরআন উগ্রবাদের শিক্ষা দেয়নি উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, যে অপরিসীম মমতায় পরম করুণাময় মানুষকে তৈরি করেছেন, মানুষের কর্ম ও বিশ্বাসের চূড়ান্ত বিচার করবেন তিনি। আমাদের ওপর সেই ভার তো কেউ দেয়নি। পবিত্র কোরআন শরীফের কোথায় লেখা আছে নিরীহ মানুষকে খুন করলে বেহেশত পাওয়া যায়, আমার জানা নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) সেই শিক্ষা মানবজাতিকে দেয়নি। কোনো ধর্মের প্রবক্তাই সেই শিক্ষা মানবজাতিকে দেয়নি।

বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে আমরা অহংকার করি, বলতে পারি এ দেশটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সহনশীলতা ও পারষ্পরিক সম্মানবোধকে সঙ্গ করে আমরা বিভেদমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। সর্বধর্মের মানুষ এখানে একসঙ্গে বসবাস করবে এটা সংবিধানের অঙ্গীকারই নয়, আমাদের সমষ্টির স্বপ্নও বটে। সেই স্বপ্নের স্মরণি ধরে একটি বহুজনবাদী বৈচিত্র্যময় রাষ্ট্র নির্মাণ তখনই সম্ভব হবে যখন আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে সুশিক্ষা, সভ্যতা মানবপ্রেমের আলোয় আলোকিত হবে।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজুর রহমান মন্টু প্রমুখ।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে