হজ কোটার অর্ধেকই রেজিস্ট্রেশন হয়নি
বিমান ভাড়া ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সার্ভিস চার্জ বাড়ানোর প্রভাব পড়েছে হজযাত্রায়। তিন দফা সময় বাড়িয়েও এবারের হজযাত্রার আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। মঙ্গলবার নিবন্ধনের শেষদিনে কোটার অর্ধেকও রেজিস্ট্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী- ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা। এ পর্যন্ত বেসরকারিভাবে মোট প্রাক-নিবন্ধন করেছেন ৪৬ হাজার ৫৫৭ জন।
সোমবার নিবন্ধন করেছেন ৫ হাজার ৮৯০ জন। আর সরকারি মোট প্রাক-নিবন্ধন করেছেন ৮ হাজার ৮৭৩ জন। সোমবার নিবন্ধন করেছেন ৫১০ জন।
ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হজ। ইচ্ছা করলেই কেউ হজে যেতে পারে না। হজের জন্য সর্বপ্রথম শর্তই হলো- আর্থিকভাবে সামর্থ্য থাকতে হবে। অতঃপর শারীরিক সক্ষমতা লাগবে। আর মানসিক প্রস্তুতিও হজের জন্য আবশ্যক বিষয়।
আর্থিক সামর্থ্য বলতে হজ করতে যত টাকা ব্যয় হবে, তা নিজে পরিশোধ করতে হবে। কোনো রকমের ধার বা ঋণ করে হজ করা যাবে না। এককথায় ঋণমুক্ত শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের ওপরেই হজ ফরজ।
বাংলাদেশ থেকে হজ পালনকারীদের একটি বড় অংশ বয়োবৃদ্ধ। যারা নিজের উপার্জন থেকে বছরের পর বছর টাকা জমিয়ে হজের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কিন্তু হঠাৎ করে হজের খরচ দেড় লাখ বেড়ে যাওয়ায় তারা বাড়তি খরচ যোগাড় করতে সক্ষম হচ্ছেন না। তার ওপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কায় অনেকে হজে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
হজ এজেন্সির মালিকরা বলছেন, এ বছর হঠাৎ খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছেন। এর আগে হজযাত্রীরা টাকা নিয়ে পেছনে ঘুরেছেন কিন্তু কোটা না থাকায় পাঠাতে পারেননি।
কিন্তু এবার কোটার অর্ধেক যাত্রীও মিলছে না। প্রাক-নিবন্ধন করতে ৩০ হাজার টাকা জমা দিতে হয় যা পরবর্তীতে ফেরতযোগ্য। আর নিবন্ধনের চূড়ান্ত সময় জমা দিতে হয় অবশিষ্ট টাকা। তবে পাহাড়সম এই খরচ না জোগাতে পেরে অনেকেই চূড়ান্ত নিবন্ধন করছেন না। বরং প্রাক-নিবন্ধনের টাকা ফেরত নেয়ার আবেদন করছেন অনেকেই।
এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ বলেন, প্যাকেজ মূল্য বেশি হওয়াতে সাড়া কম মিলছে। খরচ আরও কম হওয়া উচিত ছিল। কারণ এখন যে প্যাকেজ মূল্য ধরা হয়েছে সেটি অনেকের সাধ্যের বাইরে। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবারই খরচ কমানোর দাবি জানিয়ে আসছি। আশা করছি এ বিষয়ে সরকার একটি পদক্ষেপ নেবে।
নিবন্ধনের সময় বাড়ানো বিষয়ে আশাবাদী হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ সরদার। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষের প্রবণতাই হচ্ছে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয়া। শেষ দিনে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ নিবন্ধন করতে পারে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করছি শেষ পর্যন্ত কোটা পূর্ণ হবে। কারণ এ বছর আমরা অনেক আগে থেকেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছি। খরচ কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, খরচ কমানোর সুযোগ নাই।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাক-নিবন্ধনকারীদের হজের চূড়ান্ত নিবন্ধনের শেষ তারিখ ছিল গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি। প্রথম দফায় এই মেয়াদ ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু কোটা পূরণ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ৭ই মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন