এক সপ্তাহ পেরোলেও ফল পুনর্নিরীক্ষার উদ্যোগ নেই
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সংশোধিত ফল প্রকাশ হয় ১ মার্চ রাতে। এরপর সারাদেশ থেকে পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করে। সাতদিন ধরে উপজেলা ও থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (টিইও) কার্যালয়ে এই আবেদন নেওয়া হয়।
আবেদন নেওয়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ফল পুনর্নিরীক্ষার কোনো উদ্যোগ নেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই)। কোন নীতিমালার ভিত্তিতে ফল পুনর্নিরীক্ষা করা হবে, উত্তরপত্র দেখা হবে কি না এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যদিও ডিপিইর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত জেলা ও বিভাগ থেকে পুনর্নিরীক্ষার আবেদন পৌঁছায়নি। আবেদনগুলো পাওয়ার পরপরই এ বিষয়ে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে বৃহস্পতিবার ডিপিইতে গিয়ে মহাপরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট পরিচালকদের কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রক্রিয়াকারী কর্মকর্তাদের একজন প্রকৌশলী অনুজ কুমার রায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। প্রথমে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তাকে অনুরোধ জানানোর পর তিনি জানান, পুনর্নিরীক্ষা সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা এখনও হয়নি। এছাড়া মাঠ থেকে আবেদন এখনও আসছে। আবেদন সব পাওয়ার পর তা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবছর চার লাখ ৮২ হাজার ৯০৪ শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষা দিয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৮২ হাজার শিক্ষার্থীকে ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ গ্রেডে দেওয়া হয় বৃত্তি।
এর আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এই বৃত্তির ফল ঘোষণা করেন। কিন্তু দুই ঘণ্টার মধ্যেই এতে ভুল ধরা পরে। এরপর বিকেল ৫টা ২ মিনিটে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের (ডিপিইও) নোটিশ করে ফল স্থগিত করা হয়। ওইদিন রাত ১০টার মধ্যে শেষ হয় ফল সংশোধনের কাজ। কিন্তু এরপরও সারারাত ভুল নিরীক্ষার কাজ চলে। এমনকি পরদিন বুয়েটের একজন প্রকৌশলীকে এনে নিরীক্ষা শেষে রাত ১০টার পর প্রকাশ করা হয় ফল।
সারাদেশের ৫১৩টি ডিপিই অফিস আছে। জানা গেছে, কোনো অফিসে একটি আবার কোনো অফিসে ২০টি পর্যন্ত পুনর্নিরীক্ষার আবেদন জমা পড়েছে। তবে গড়ে প্রতি উপজেলায় ১০টি আবেদন পড়েছে বলে জানায় ডিপিই। সেই হিসাবে মোট পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী এই ফল চ্যালেঞ্জ করেছে।
ডিপিই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশে যে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে তার ফল ডিপিই’র বিভাগীয় কার্যালয়ে তৈরি হতো। ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা শুরুর পর টিইও অফিসে কোডিং আর ডিকোডিং পদ্ধতিতে ফল তৈরি করা হতো। করোনার সময় দুই বছর পিইসি পরীক্ষা হয়নি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পিইসি বাদ করে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু বিভাগের পরিবর্তে পিইসির মতো ঢাকায় ডিপিইতে ফল তৈরি করা হয়। তবে সমস্যা হয় ডিকোডিংয়ে।
এবার উপজেলা শিক্ষার্থীদের নম্বর সফটওয়্যারে ইনপুট দিলেও তা ডিকোড বা ফল তৈরি করে দেয়নি। ফলে সারাদেশের ডাটা যখন এক জায়গায় করে ডিকোডের চেষ্টা করা হয়, তখন সমগোত্রীয় ডাটা একটার সঙ্গে আরেকটা মিশে যায়। ফলে নষ্ট হয়ে যায় সফটওয়্যারের মাথা। তখন পরীক্ষা না দেওয়া শিক্ষার্থীর রোল নম্বরের বিপরীতসহ যেখানে পেরেছে তথ্য চলে গেছে। এতেই ভুল ফল তৈরি হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই ফল তৈরির ক্ষেত্রে মহাপরিচালক ও সংশ্লিষ্ট পরিচালকরা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তারা কাজটি আন্তরিকতার সঙ্গে না করে কেবল কম্পিউটার সেলের ওপর ছেড়ে দেন। অন্যদিকে কোনো সহযোগী ছাড়া একজন প্রকৌশলী তাড়াহুড়ো করে ফল তৈরি করেন। ফলে ঘটে ভুলের ঘটনা।
আরও জানা গেছে, ফলপ্রকাশের পর প্রথমে উল্লিখিত প্রকৌশলীই ভুলটি চিহ্নিত করেন। যদিও তদন্তে সবচেয়ে বড় শাস্তির সুপারিশও তার বিরুদ্ধে করা হয়েছে। এর আগে পিইসিতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১১ বছর একটানা পরীক্ষা চলে। ওই পরীক্ষার বৃত্তির ফলও এই প্রকৌশলী করেন। তখন এ ধরনের ভুলের ঘটনা ঘটেনি।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন