প্রকাশিত : ১৮ মে, ২০২৩ ১৫:৫২

সমকামিতার ফাঁদ পেতে অপহরণ, ১০ লাখ টাকা না পেয়ে আমিরকে হত্যা

অনলাইন ডেস্ক
সমকামিতার ফাঁদ পেতে অপহরণ, ১০ লাখ টাকা না পেয়ে আমিরকে হত্যা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন মেসেঞ্জার গ্রুপে সমকামী তরুণদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতো একটি চক্র। এরপর আগ্রহী তরুণদের গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় এনে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে ছেড়ে দিতো।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে এ চক্রের ডাকে ঢাকায় আসেন আমির হোসেন (২৫)। এরপর চক্রের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অপহৃত হন। পরে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করলেও টাকা না পেয়ে আমিরকে হত্যা করে লাশ গুম করে চক্রটি।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে বুধবার (১৭ মে) নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির দক্ষিণখান থানা পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. তারেক ওরফে তারেক আহাম্মেদ (৩১), মোহাম্মদ হৃদয় আলী (২৯), আশরফুল ইসলাম (২৩), রাসেল সরদার (২৫), তৌহিদুল ইসলাম বাবু (৩০)।

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ২০২২ সালের ১৭ ডিসিম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা আবু তাহেরের ছেলে আমির হোসেন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ঢাকা আসেন। এরপর ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণখান থানার আশকোনা মেডিকেল রোডে আমিরের বড় বোন নুরনাহার বেগম (৩৪) বাসায় ওঠেন। এরপর ২৮ ডিসেম্বর আমিরের ছোট বোন কামরুন্নাহারকে (২২) চক্রের সদস্যরা তার ভাইয়ের মুক্তির জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করেন।

ওই ঘটনায় আমিরের বড় ভাই বিল্লাল হোসেন (৪০) দক্ষিণখান থানায় ওইদিনই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির পর থেকে অপহৃত আমিরকে উদ্ধারে অভিযান চালায় পুলিশ। পরে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল বিল্লাল থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও চতুর। তাদের শনাক্ত করতে বেশ কয়েকবার কৌশল পরিবর্তন করা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চক্রের সদস্য আশরাফুল ইসলামকে সাভারের জিরাবো এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

তার দেওয়া তথ্যে রাসেল সরদার ও তৌহিদুল ইসলাম বাবুকে গ্রেফতার করা হয়। তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে চক্রের মূলহোতা তারেক আহাম্মেদ ও তার সহযোগী মোহাম্মদ হৃদয় আলীর অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর বুধবার দক্ষিণখান থানার বিশেষ একটি দল নোয়াখালীর দুর্গম হাতিয়া দ্বীপে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।

উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার আরও বলেন, গ্রেফতারদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার একটি বাড়ির পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংক থেকে অপহৃত আমিরের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পলিথিনে মোড়ানো বস্তাবন্দি গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, গ্রেফতার চক্রের মূলহোতা তারেকের ‘কষ্টের জীবন’ নামের একটি ফেক ফেসবুক আইডি ছিল। এ আইডি দিয়ে বিভিন্ন সময় ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সমকামিতার প্রস্তাব দিতো। যারা তার প্রস্তাবে রাজি হতো তাদের গাজীপুরের চৌরাস্তা/শ্রীপুর/মাওনাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডেকে আনতো।

এরপর মোবাইল ও টাকা কেড়ে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিতো। ঠিক এভাবেই আমিরকে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে গাজীপুর চৌরাস্তায় ডেকে নেওয়া হয়। আমির তার বোনের বাসা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তায় গেলে তারা তাকে জিম্মি করে। পরে তার বোনের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। দাবি করা মুক্তিপণ না পাওয়ায় ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমিরকে হত্যা করে। এরপর মরদেহ বস্তায় ভরে বাসার পেছনে পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রেখে আত্মগোপনে চলে যায় তারা।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে