প্রকাশিত : ১৮ মে, ২০২৩ ১৫:৫৪

রোগীর অপারেশনে রাঁধুনি-মালি-পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কীভাবে সম্ভব

অনলাইন ডেস্ক
রোগীর অপারেশনে রাঁধুনি-মালি-পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কীভাবে সম্ভব

কুড়িগ্রামের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কোন পদে কত জনবল প্রয়োজন তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক সপ্তাহের মধ্যে এ তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে।

অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকের সহযোগী হিসেবে রাঁধুনি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও মালির কাজ করার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, হাসপাতালে লোকবল সংকট থাকতে পারে, তাই বলে চিকিৎসকের সহযোগী হিসেবে রাঁধুনি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও মালিকে দিয়ে অপারেশন থিয়েটারে কাজ করানো হবে, এটা কীভাবে সম্ভব?

গতকাল বুধবার (১৭ মে) কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার কাজ রাঁধুনি, মালি, ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে চলছে কি না, তা খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান বা তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে উচ্চ আদালত এ নির্দেশ দেন।

পরে এ বিষয়ে আরও শুনানির জন্য আগামী ২৪ মে পরবর্তী দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী আসাদুজ্জামান আনসারি।

এ সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার (১৭ মে) বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটকারী আইনজীবীকে এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আনসারি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মঈনুল হাসান।
গত মঙ্গলবার (১৬ মে) জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আনসারী এ রিট দায়ের করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, চিকিৎসার বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানের (জুডিশিয়াল ইনকয়ারির) নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে। একই সঙ্গে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয় চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি রিটে রাঁধুনি, মালি, ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে চিকিৎসায় সার্জারির কাজ করানোর মতো অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

রিটে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), কুড়িগ্রামের সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন ও কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসককে বিবাদী করা হয়।

দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে জনস্বার্থে মঙ্গলবার (১৬ মে) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আনসারি।

জানা গেছে, রাঁধুনি, মালি, ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে চলছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবার কাজ। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় বছরের পর বছর এভাবেই চলছে চিকিৎসাসেবা। এতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ওয়ার্ড বয়, মালি, রাঁধুনি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা করছেন সার্জারি ও অপারেশনের কাজ। শুধু অপারেশন থিয়েটার নয়, হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগেও চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন কর্মীরা।

রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে হাসপাতালটি ২৫ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। জনবল রয়েছে মেডিকেল অফিসার পদে আটজন, নার্সিং সুপারভাইজার একজন, সিনিয়র নার্স ২৬ জন, মিডওয়াইফ ছয়জন, ল্যাব টেকনিশিয়ান দুজন, প্রধান সহকারী একজন, অফিস সহায়ক তিনজন, ফার্মাসিস্ট দুজন, পরিসংখ্যানে একজন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক দুজন, অ্যাম্বুলেন্স চালক একজন, মালি একজন, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে পাঁচজন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী তিনজন।

স্বাস্থ্য সহকারী ৩০টি পদের বিপরীতে ১৭ জন, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে ছয়জনের বিপরীতে চারজন ও ওয়ার্ড বয় তিনটি পদের মধ্যে একজন রয়েছেন।
অন্যদিকে ডেন্টাল চিকিৎসক, এমটি ডেন্টাল, ইপিআই, রেডিও গ্রাফার, কার্ডিওগ্রাফার, ক্যাশিয়ার, স্টোরকিপার, জুনিয়র মেকানিকেল পদগুলো শূন্য রয়েছে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে