প্রকাশিত : ১১ আগস্ট, ২০২৩ ১১:৫৪

নারীকে দুই বছর ধরে ধর্ষণ, হাসপাতাল পরিচালক কারাগারে

অনলাইন ডেস্ক
নারীকে দুই বছর ধরে ধর্ষণ, হাসপাতাল পরিচালক কারাগারে
নাটোরে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে এক নারীকে দুই বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগে উজ্জ্বল মৃধা (৩২) নামে এক যুবককে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তিনি নাটোর শহরের কানাইখালি এলাকার বিসমিল্লাহ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
 
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে নাটোর সদর আমলী আদালতের বিচারক মো. রওশন আলমের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে উজ্জ্বলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
 
নাটোর সদর করা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, চার বছর আগে অভিযুক্ত উজ্জ্বলের সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরিচয় হয়। এক রোগীকে ওই ক্লিনিকে চিকিৎসা দিতে আনার সূত্র ধরে উজ্জ্বলের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তখন উজ্জ্বল নির্দিষ্ট কমিশন দেওয়ার শর্তে ভুক্তভোগী নারীকে ওই ক্লিনিকে রোগী পাঠাতে বলেন। এভাবে ধীরে ধীরে উজ্জ্বলের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে উজ্জ্বল ওই নারীকে ক্লিনিকের মাঠকর্মী হিসেবে কাজের প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হন। তখন থেকে হাসপাতালে চাকরির পাশাপাশি রোগী বেশি থাকলে বা কোনো রোগীর রাতে অপারেশন হলে ভুক্তভোগী নারী রাতে হাসপাতালে অবস্থান করতেন।
 
ভুক্তভোগী নারী তার অভিযোগে বলেছেন, ২০২১ সালের মাঝামাঝি রোগীর চাপের কারণে একদিন তিনি হাসপাতালে অবস্থান করেন। ওইদিন বাথরুমে গোসলের সময় উজ্জ্বল গোপনে সেই ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিওর কথা গোপন রেখে কথাবার্তার মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে অবৈধ সম্পর্কের প্রস্তাব দেন উজ্জ্বল। রাজি না হওয়ায় গোপনে ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। ওই নারী ঘটনাটি পুলিশকে জানানোর উদ্যোগ নিয়ে উজ্জ্বল তাকে হাসপাতালের কাজে যোগ দিতে বলেন ও তার সামনে ফোন থেকে গোসলের ভিডিওটি ডিলিট করার আশ্বাস দেন।
 
উজ্জ্বলকে বিশ্বাস করে ওই নারী কাজে যোগ দিতে গেলে হাসপাতালের ছয় তলায় উজ্জ্বলের কক্ষে ডেকে নিয়ে রাতভর তাকে ধর্ষণ করেন। এই ধর্ষণের ভিডিও গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেন উজ্জল। এবার সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টানা দুই বছর উজ্জ্বল ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। এই সময়ের মধ্যে ওই নারী গর্ভধারণ করলে জোর করে তাকে গর্ভপাতে বাধ্য করেন। সর্বশেষ গত ২ জুন উজ্জ্বল আবারও ওই নারীকে হাসপাতালে তার কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন। এরপর ওইদিন তিনি নাটোর থানায় মামলা করেন।
 
ভুক্তভোগী নারী বলেন, গোপন ছবি ও গোসলের ভিডিও ধারণের পর ব্ল্যাকমেইল করে উজ্জ্বল শহরের একাধিক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। তার এই কাজে বিসমিল্লাহ হাসপাতালের অন্য পার্টনাররা জড়িত। তাদের সহযোগিতায় সে আমাকে দুই বছর ধরে ধর্ষণ করেছে। তার মোবাইল, ল্যাপটপ ও অন্য ডিভাইসে এসব ছবি ও ভিডিওর প্রমাণ পাওয়া যাবে। আমি এ ঘটনায় বিচার চাই।
 
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহমেদ বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে ভুক্তভোগী নারী থানায় মামলা করেন। পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে মামলাটি নিয়েছে। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে উজ্জ্বল কারাগারে আছে।
 
নাটোর জেলা পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের ভেতরে এক নারীকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করার ঘটনাটি পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। অভিযুক্ত পরিচালকের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা অন্য কোনো ডিভাইসে আরও নারীদের ব্ল্যাকমেইলের কোনো ছবি বা ভিডিও রয়েছে কি না তা অনুসন্ধান করবে পুলিশ। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।
 
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন
উপরে