প্রকাশিত : ৩ জুলাই, ২০২৪ ১৮:১৮

ফের সাদিক অ্যাগ্রোতে দুদক, ৬ ব্রাহমা গরু জব্দ

অনলাইন ডেস্ক
ফের সাদিক অ্যাগ্রোতে দুদক, ৬ ব্রাহমা গরু জব্দ

আলোচিত ‘ছাগলকাণ্ডের’ পর সাদিক অ্যাগ্রোতে একের পর এক অভিযান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রোর আরও একটি খামারে অভিযান চালিয়ে ৬টি ব্রাহমা জাতের গরুর সন্ধান পেয়েছে কমিশন। অভিযানে আমদানি নিষিদ্ধ এসব গরু জব্দ করা হয়েছে।

বুধবার (৩ জুলাই) দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালামের নেতৃত্বে একটি টিম এ অভিযান পরিচালনা করে।

গতকাল মঙ্গলবার আমদানি নিষিদ্ধ গরুর তালিকাসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস হাউজে গিয়েছিল দুদকের ওই আভিযানিক টিম। তালিকা সংগ্রহের পরই বেশকিছু নতুন তথ্য উঠে আসে। যে কারণে আজ আবারও সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এ বিষয়ে দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম বলেন, আগের অভিযানের ধারাবাহিকতায় আজ আবারও এনফোর্সমেন্ট অভিযান হয়েছে। অভিযান শেষে বিস্তারিত তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হবে।

গত ১ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালামের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের পৃথক তিনটি টিম অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে সাভার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার এবং সাদিক অ্যাগ্রোর সাভার, মোহাম্মদপুর ও নরসিংদী ফার্মে দিনভর অভিযান চালায়। অভিযানকালে ৪৮৮টি গরু জবাই ও মাংস বিতরণ এবং ৬০০ টাকা কেজি হিসাবে আদায় করা টাকা সরকারি তহবিলে জমা সংক্রান্ত বেশকিছু অসঙ্গতি বা অনিয়ম পায় দুদক টিম।

দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, অভিযানকালে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র টিম সংগ্রহ করে। এছাড়া সাদিক অ্যাগ্রোর সাভারের ফার্মে দুইশোর বেশি বিদেশি গরুর সন্ধান পাওয়া যায়। যার মধ্যে আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরুর ৭টি বাছুরও রয়েছে। ওইদিন গাজীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে আরেকটি টিম সাদিক অ্যাগ্রোর নরসিংদীর ফার্মে অভিযান চালায়। তবে ওই অভিযানে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়।

১ জুলাইয়ের অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০২১ সালে বিদেশ থেকে আসা আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরু কাস্টমস কর্মকর্তারা জব্দ করেন। সেগুলোকে পরে লালন-পালনের জন্য সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে গত রমজানের ঈদে গরুগুলোর মাংস বিক্রির জন্য কমিটি গঠন এবং মাংস বিক্রি করা হয়।

তিনি বলেন, অভিযানে সাভারে গিয়ে একটি শেডে ব্রাহমা জাতের ৫টি গরু ও ৭টি বাছুরের সন্ধান মিলেছে। এরপর একটি ঘরে ১৫ লাখ টাকা দামের আলোচিত সেই ছাগলটি পাওয়া যায়। অভিযানে বেশকিছু তথ্য ও নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযানে প্রাপ্ত বিস্তারিত তথ্য শিগগির প্রতিবেদন আকারে কমিশনে দাখিল করা হবে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, করোনা মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে ১৮টি ব্রাহমা গরু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়। কিন্তু গরুগুলো গ্রহণ করার জন্য শাহজালাল বিমানবন্দরে কর্তৃপক্ষের কেউ যাননি। পরে জানা যায়, ওই গরুগুলোর আমদানিকারক সাদিক অ্যাগ্রো লিমিটেড। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে সেসব গরু আমদানি করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে আরও জানা যায়, ২০২১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে করে ১৮টি ব্রাহমা গরু দেশে আনে সাদিক অ্যাগ্রো। যার মধ্যে একটি গরু আকাশপথেই মারা যায়। তখন সাদিক অ্যাগ্রো তিনটি জাল নথি জমা দিয়েছিল। সেগুলো হলো- গবাদিপশু আমদানি সংক্রান্ত একটি নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণী কোয়ারেন্টাইন বিভাগের কাছ থেকে একটি চিঠি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গবাদিপশু আমদানির অনুমতিপত্র। যার প্রতিটিই জাল হিসেবে চিহ্নিত করেন শুল্ক কর্মকর্তারা।

জাল নথি দিয়ে গরু আমদানির ঘটনায় তখন মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় আদালতের রায় আসে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষে। ফলে ওই ১৭টি ব্রাহমা গরু বাজেয়াপ্ত করে রাখা হয় কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে। গরুগুলো ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ওই সরকারি খামারেই রাখা হয়। সেই আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের একাধিক গরু সাদিক এগ্রোতে থাকাসহ গরু চোরাচালানের অভিযোগ ওঠে সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে।

`দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে