প্রকাশিত : ৩ জুলাই, ২০২৪ ১৮:২৩

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিধান বহাল থাকবে

অনলাইন ডেস্ক
সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিধান বহাল থাকবে

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিধান বহাল থাকবে। ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’ সংশোধন করে প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাইরে সরকারি কর্মচারীদের আলাদা করে সম্পদের হিসাব না দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীসময়ে সেই সংশোধিত বিধিমালাটি চূড়ান্ত হয়নি।

নতুন করে সরকারি কর্মচারীদের যে আচরণ বিধিমালা করা হচ্ছে সেখানে সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিধান বহাল রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিধিমালাটি ভেটিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) করে দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ। তবে নতুন সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা এখনো চূড়ান্ত করেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

যদিও ১৯৭৯ সালের বিধিমালা কার্যকর করে সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব নিশ্চিতের জন্য মঙ্গলবার (২ জুলাই) নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’ অনুযায়ী, পাঁচ বছর পর পর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল এবং স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা বিক্রির অনুমতি নেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর সচিবালয়ে তখনকার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এনবিআর, আমি এবং জনপ্রশাসন সচিব বসেছিলাম। বিষয়টি ক্লিয়ার করেছি। সম্পদের হিসাব আর আলাদা করে দেওয়ার দরকার নেই। প্রতি বছর আমরা যে রিটার্ন দেই সেখানে একটি পৃষ্ঠার মধ্যে সম্পদের হিসাব দিতে হয়, ওই পেজটা জনপ্রশাসনকে দিয়ে দেবো।

‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’ অনুযায়ী, পাঁচ বছর পর পর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল এবং স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা বিক্রির অনুমতি নেওয়ার নিয়ম রয়েছে

১৯৭৯ সালের আচরণ বিধিমালায় ‘সম্পত্তির ঘোষণা’ উপ-শিরোনামের ১৩ বিধিতে বলা হয়েছে- প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাহার অথবা তাহার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন বা দখলে থাকা শেয়ার, সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বিমা পলিসি এবং মোট পঞ্চাশ হাজার টাকা বা ততোধিক মূল্যের অলঙ্কারাদিসহ সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে সরকারের নিকট ঘোষণা দিতে হইবে এবং উক্ত ঘোষণায় নিম্নোক্ত বিষয়াদির উল্লেখ থাকিবে-

(এ) যে জেলায় সম্পত্তি অবস্থিত উক্ত জেলার নাম। (বি) পঞ্চাশ হাজার টাকার অধিক মূল্যের প্রত্যেক প্রকারের অলঙ্কারাদি পৃথকভাবে প্রদর্শন করিতে হইবে, এবং (সি) সরকারের সাধারণ বা বিশেষ আদেশের মাধ্যমে আরও যেই সমস্ত তথ্য চাওয়া হয়।

প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে প্রতি পাঁচ বৎসর অন্তর ডিসেম্বর মাসে উপবিধি-(১) এর অধীনে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, প্রদত্ত ঘোষণায় অথবা বিগত পাঁচ বৎসরের হিসাব বিবরণীতে প্রদর্শিত সম্পত্তির হ্রাস-বৃদ্ধি হিসাব বিবরণী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের নিকট দাখিল করিতে হইবে।

নতুন আচরণ বিধিমালার খসড়ার ১০ বিধিতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী চাকরিতে যোগদানের সময়, সরকার কর্তৃক, সময় সময়, নির্ধারিত ফরমে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন বা দখলে থাকার শেয়ার সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বিমা পলিসি এবং অলঙ্কারাদিসহ নগদ রূপান্তরযোগ্য সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা প্রদান করবেন।

প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে প্রতি পাঁচ বৎসর অন্তর ডিসেম্বর মাসে উপবিধি-(১) এর অধীনে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, প্রদত্ত ঘোষণায় অথবা বিগত পাঁচ বৎসরের হিসাব বিবরণীতে প্রদর্শিত সম্পত্তির হ্রাস-বৃদ্ধি হিসাব বিবরণী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের নিকট দাখিল করিতে হইবে

এর আগে ২০২১ সালে ১৯৭৯ সালের আচরণ বিধিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার তাগিদ দিয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে চিঠি দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর দফায় দফায় এ বিধিমালার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়া যায়নি।

সম্প্রতি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের বিপুল অবৈধ সম্পত্তির তথ্য সবার সামনে এলে সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিষয়টিও সামনে আসে।

এর মধ্যে মঙ্গলবার (২ জুলাই) জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলান তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সম্পদ বিবরণীর ঘোষণা ও সময়ে সময়ে দাখিলের বিধি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের বিপুল অবৈধ সম্পত্তির তথ্য সবার সামনে এলে সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিষয়টিও সামনে আসে

একই সঙ্গে রুল জারি করেছেন আদালত। রুলে সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের অবৈধ সম্পদ অর্জন রোধে প্রয়োজনীয় নীতিমালা, আইন ও নীতি করতে বিবাদীদের ভয়াবহ ব্যর্থতা এবং কথিত নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না এবং সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী প্রকাশ ও ডিজিটাল মাধ্যমে সময়ে আপডেট করার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন।

অনুমতি নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন কর্মচারীরা
খসড়া আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীরা অনুমতি সাপেক্ষে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

১৯৭৯ সালের আচরণ বিধিমালায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী বিনিয়োগের ফটকা ব্যবসা করবেন না। যে সমস্ত সিকিউরিটিজের মূল্যমান অস্বাভাবিক ওঠানামার বদনাম আছে ওই সমস্ত সিকিউরিটিজের অভ্যাসগতভাবে ক্রয়-বিক্রয় এই উপ-বিধির অধীনে বিনিয়োগের ফটকা ব্যবসা বুঝাবে।

নতুন বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে- কোনো সরকারি কর্মচারী এমন কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারবেন না, যার মূল্য প্রতিনিয়ত অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে। তবে প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান সাপেক্ষে বিনিয়োগের উৎস উল্লেখ করে ও সরকারের অনুমোদনক্রমে পুঁজিবাজারের নিবন্ধিত কোনো কোম্পানির প্রাথমিক শেয়ার বা বন্ড ক্রয় বা বিক্রয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে শর্ত থাকে যে, কোনো সরকারি কর্মচারী অফিস চলাকালীন এ সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না।

`দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে