‘নতুন ভোটের পথ’ খোলা এবং শান্তি ফেরানোই মূল কাজ হবে, বিদেশ থেকেই বাংলাদেশ-বার্তা ইউনূসের
পড়ুয়াদের আর্জি মেনে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে চলেছেন মুহাম্মদ ইউনূস। সেই দায়িত্ব গ্রহণের আগে সাধারণ জনগণের উদ্দেশে বার্তা দিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তাঁর মতে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি দেশের সরকারের প্রতি মানুষের আশা-ভরসা ফিরে আসা। সেই সঙ্গে দেশে নির্বাচনের নতুন রূপরেখা তৈরিও দরকার বলে মনে করছেন ইউনূস। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘ফিনান্সিয়্যাল টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি জানান, দেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করতে নতুন নেতৃত্বকে এখন থেকেই প্রস্তুত হতে হবে।
মঙ্গলবার ঢাকার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহবুদ্দিনের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে ইউনূসকে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইউনূস সেই প্রস্তাবে রাজি হন। সূত্রের খবর, নোবেলজয়ী বর্তমানে প্যারিসে রয়েছেন। বৃহস্পতিবারই তিনি বাংলাদেশে ফিরতে পারেন বলে শোনা গিয়েছে। ‘ফিনান্সিয়্যাল টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউনূস বলেছেন, ‘‘দেশের মুক্তির স্বার্থে এত পড়ুয়া ত্যাগ স্বীকার করেছে। ক’জনের প্রাণ গিয়েছে! ওদের আমি না বলতে পারব না। কিছু দিনের মধ্যেই আমি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসব। বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে কী ভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করব। রাজনৈতিক দলগুলি কী ভাবে তাতে অংশগ্রহণ করতে চায়, তা নিয়ে কথা হবে।’’ অন্তর্বর্তী সরকারে তাঁর ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে বার্তা দিয়েছেন ইউনূস। ‘ফিনান্সিয়্যাল টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউনূস বলেন, ‘‘এই অন্তর্বর্তী সময় আমার যা দায়িত্ব, তার বাইরে গিয়ে আমার কোনও দফতর চাই না।’’
ইউনূসের ফেসবুক পেজেও তাঁর একটি বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সকলকে সতর্কও করেছেন। ইউনূসের বার্তা, ‘‘আমাদের কোনও প্রকাশ ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সকলকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে, সব ধরনের সহিংসা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্র ও দলমত নির্বিশেষে সকলকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমাদের প্রিয় এই সুন্দর ও বিপুল সম্ভাবনাপূর্ণ দেশটিকে আমাদের নিজেদের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা এবং একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন আমাদের প্রধান কাজ। একটি নতুন পৃথিবী বিনির্মাণে আমাদের তরুণেরা প্রস্তুত। অকারণ সহিংসতা করে এই সুযোগ আমরা হারাতে পারি না। সহিংসতা আমাদের সকলেরই শত্রু। অনুগ্রহ করে শত্রু সৃষ্টি করবেন না। সকলে শান্ত থাকুন এবং দেশ পুনর্গঠনে এগিয়ে আসুন।’’
সোমবার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। হাসিনার দেশত্যাগের পর সোমবারই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সাংবাদিক সম্মেলনে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার কথা ঘোষণা করেন। ওই সরকারের প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয় সেনাপ্রধানের ঘোষণার পর থেকে। এই পরিস্থিতিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর শীর্ষ সারিতে থাকা ছাত্রনেতারা জানিয়ে দিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে তাঁরা ইউনূসকে চান। এর পর মঙ্গলবারের বৈঠকে সেই প্রস্তাবে সিলমোহর পড়ে।
২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন ইউনূস। তাঁকে ওই সম্মান দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে তাঁর তৈরি মাইক্রোফিন্যান্স ব্যাঙ্কের জন্য। ওই ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে ইউনূস বাংলাদেশের লক্ষাধিক দরিদ্র মানুষকে দারিদ্রসীমা থেকে টেনে তুলেছেন বলে মনে করেছিল নোবেল কমিটি। যদিও তাঁর নিজের দেশের সরকারের ভিন্ন মত ছিল। প্রকাশ্যেই ইউসুফের সমালোচনা করতে দেখা যেত হাসিনাকে। ইউনূসের সংস্থা গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দেশের শ্রম আইন ভাঙারও অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী যে কোনও সংস্থায় কর্মীদের কল্যাণমূলক তহবিল তৈরি করতে হয়। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকমে ওই তহবিলের ব্যবস্থা ছিল না। বাংলাদেশের শ্রম আইন ভাঙার অভিযোগে গত জানুয়ারি মাসে অর্থনীতিবিদকে ছ’মাসের জেলের সাজাও শুনিয়েছিল ঢাকার আদালত। এখন সেই ইউনূসের দিকেই তাকিয়ে গোটা বাংলাদেশ।