দেশের প্রতিটি পরিবার পাবে ‘স্বপ্ন প্রকল্প ফ্যামিল কার্ড’: তারেক রহমান
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, তার দল জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারকে খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে ‘স্বপ্ন প্রকল্প ফ্যামিল কার্ড’ প্রদান করা হবে।
পরিবারের মা বা গৃহিণীর নামে ‘স্বপ্ন প্রকল্প ফ্যামিল কার্ড’ প্রদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের পক্ষে সকল নাগরিক পর্যায়ক্রমে কার্ডটি পাবেন। প্রাথমিকভাবে তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায়ের সুবিধা বঞ্চিতরা এর আওতায় আসবেন এবং পরিবারের সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ চার জন বিবেচনায় এ কার্ড বিতরণ করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, এলাকার সকলেই এর প্রাপক হবেন বিধায় কোন প্রকার দলীয় বা স্থানীয় প্রভাবে কাউকে বঞ্চিত করার সুযোগ থাকবে না। নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর একটি অংশ এই কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য এর প্রবর্তন করা হলেও পরবর্তীতে সকলেই এর প্রাপক হবেন।
আজ সোমবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে ‘গণসমাবেশ ও আন্দোলনে শহিদ পরিবার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা’ শিরোনামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বক্তব্য দেন। এতে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও ময়মনসিংহ বিভাগ সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলমের সভাপতিত্বে এবং কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেজ আলী মামুন, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি রেজাউল করিম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে এই গণসমাবেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুম-খুন, হামলায় আহত ক্ষতিগ্রস্ত ও তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের ওপর নির্যাতনের বিশদ বর্ণনা দেন। বিকেল ৩ টায় কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১২টার আগে থেকেই মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন দলটির নেতা-কর্মীরা। কিশোরগঞ্জ সদর, অষ্টগ্রাম, ইটনা, কটিয়াদী, ভৈরব, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর, তাড়াইল, হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া, কুলিয়ারচর, মিঠামইন, নিকলী এলাকার নেতা-কর্মীরা হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের প্রতিকৃতি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে তারা এ গণসমাবেশে যোগ দেন। এ সময়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে কিশোরগঞ্জ জেলার পুরাতন স্টেডিয়াম এলাকাসহ এ শহরের প্রতিটি অলিগলি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজকে আমরা সকলে এই মাঠে একত্রিত হয়েছি, মুক্ত পরিবেশে কথা বলছি, ভয়হীন পরিবেশে আমরা কথা বলছি। আজকে মঞ্চে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কথা শুনেছি, স্বজন হারানো মানুষের বক্তব্য শুনেছি। যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আজকে আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি। ভয়হীন এই পরিবেশ তৈরি করার জন্য বিগত ১৭ টি বছর এদেশের মানুষের অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই পরিবেশটির জন্য দেশের মানুষকে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়েছে, সংগ্রাম করতে হয়েছে, প্রতিবাদ- প্রতিরোধ করতে হয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কিশোরগঞ্জ জেলাতে ১৭ জন মানুষকে আমরা হারিয়েছি, যারা আত্মত্যাগ করেছেন এই দেশের মানুষের অধিকারের জন্য। আন্দোলন-সংগ্রামে বাংলাদেশে হাজারো মানুষ শহিদ হয়েছেন, যারা আত্মত্যাগ করেছেন গত ১৫-১৬ বছর ধরে।
বিশেষ করে গত জুলাই-আগস্ট মাসে শত শত ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর বাইরেও বহু মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনে বিএনপির ৬০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, ‘শুধু বিএনপি’র নেতা-কর্মী নয়, বিরোধী দলসহ বহু সাধারণ মানুষ অত্যাচারিত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে। এত মানুষ শহীদ হয়েছেন, এত মানুষ আত্মত্যাগ করেছেন, এত মানুষ নির্যাতিত হয়েছেন, কেন এই মানুষগুলো আত্মত্যাগ করলেন, কেন শহিদ হলেন, কারণ তারা বাংলাদেশের আপামর জনতার রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে চেয়েছেন। আজকে আমরা যে মুক্ত পরিবেশে কথা বলছি এরকম মুক্ত পরিবেশ তারা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার বাংলাদেশের মানুষকে আবদ্ধ করে রেখেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে গুলির সামনে নিজেদের বুক পেতে কিভাবে দাবি আদায় করতে হয়। এদেশের মানুষ বারবার প্রমাণ করেছেন, তারা স্বৈরাচারীর শাসন মেনে নিতে রাজি নয়। ১৯৭১ সালে যেমন লাখ-লাখ শহীদের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তেমনি রক্ত দিয়ে ৫ আগস্ট মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য স্বৈরাচারকে বিদায় দিতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এই আত্মত্যাগ আমাদের ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ নতুন প্রত্যাশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ভবিষ্যতের জন্য তাকিয়ে আছে অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ যে প্রত্যাশা নিয়ে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে সেই প্রত্যাশা প্রতিফলন ঘটাতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ মুক্তভাবে কথা বলতে পারবে, বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। সেই বাংলাদেশ আমাদের গড়ে তুলতে হবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বৈরাচারী পতন হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন হওয়ার পরেও স্বৈরাচারের দোসররা এখনো দেশে রয়ে গেছে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি বহু মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময় যে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সরকারকে ব্যর্থ করতে দেওয়া যাবে না। এ দেশের জনগণের প্রত্যাশা হচ্ছে তাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাওয়া। বিগত ১৭ বছর সংগ্রাম করে সেই অধিকার যাতে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে অন্তর্বর্তী সরকার।’
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাদের এটিও সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে জনগণের চাওয়া-পাওয়া নষ্ট হয়ে না যায়। আবার নতুন করে কোনো স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করার সুযোগ না পায়। স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা তাদের ষড়যন্ত্রকে অব্যাহত রেখেছে। তাই গণতন্ত্রের পক্ষে সকল রাজনৈতিক দল প্রতিটি মানুষকে সজাগ থাকতে হবে। একইভাবে আমরাও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র মেরামতের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।’
কিশোরগঞ্জ জেলাকে একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল হিসেবে অভিহিত করে তারেক রহমান বলেন, ‘বোরো মৌসুমে আপনাদের এখানে প্রচুর ধান হয়। আপনারা কি জানেন আপনারা যে ধান উৎপাদন করেন তা সমগ্র বাংলাদেশের ১৬ শতাংশ ধান উৎপন্ন হয় কিশোরগঞ্জে। যদি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয়, কৃষক ভাইয়ের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া যায় তাহলে উৎপাদন ১৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ কিংবা ২৫ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব। আর একটি সম্ভাবনার ক্ষেত্রে অষ্টগ্রামের হাওর। এখানে বিভিন্ন প্রকার মাছ পাওয়া যায়। এ মাছের চাহিদা বিশাল চাহিদা সম্পন্ন করে অষ্টগ্রামে হাওর। পোশাকশিল্প যদি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায় তাহলে কেন আমরা মাছ চাষ করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারর না। জেলেদের সঠিক প্রশিক্ষণ দিয়ে মাছ রপ্তানি করে বিদেশে বাংলাদেশকে পরিচিত করে তুলব। আমাদেরকে বিষয়টিকে এভাবে চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের মাছের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম হবে। এতে শুধু মাছ রপ্তানিই হবে না এর সাথে বিভিন্ন প্রক্রিয়া যুক্ত হবে। মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এই কাজগুলোকে করতে পারবে জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকার। বেকার যারা থাকবে তাদের তাদের কর্মসংস্থ হবে।’
তারেক রহমান বলেন, যে আশা নিয়ে স্বৈরাচারকে হটিয়ে বাংলাদেশের মানুষ অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে, আমরা আশা করি তারা সেই প্রত্যাশা পূরণ করবে। মানুষের পক্ষে কাজ করবে। বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। বেশ সকল বিপদ কেটে যায়নি আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে সামনে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে একটি সম্ভাবনাময় দেশ, একটি সম্ভাবনাময় জাতি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক মুক্তি হলেই সব কিছু মুক্তি হয়ে যাবে না। রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা অর্থনৈতিক মুক্তি হতে হবে। জয় পেতে হলে আমাদের আন্দোলন কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
দেশনায়ক তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাধাগ্রস্ত করার জন্য স্বৈরাচারেরা এখনো তাদের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। শহিদদের আত্মত্যাগ তখনই মূল্যায়িত হবে যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কাজ করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিগত দিন দেখেছি স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন ভাবে জাতিকে বিভক্ত করেছে। বিএনপি বিভক্তি চায় না, আমরা চাই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে।’ সূত্র: বাসস