প্রকাশিত : ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ ০২:২০

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবকে কী বললো ঢাকা?

চাঁদনী ডিজিটাল ডেস্কঃ
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবকে কী বললো ঢাকা?

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হলো, সেটি নিয়মিত হওয়ার কথা থাকলেও এবার অনুষ্ঠিত হলো প্রায় ১৫ বছর পর ।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিনের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এছাড়া তিনি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলাদা বৈঠক করেন।

নতুন পথচলার প্রথম আনুষ্ঠানিক আলাপে দুই দেশের 'অমীমাংসিত ঐতিহাসিক বিষয়' যেমন আলোচিত হয়েছে, তেমনি সম্পর্ক জোরদারের প্রসঙ্গও এসেছে।

স্বাধীনতাপূর্ব ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে চার দশমিক তিন দুই বিলিয়ন বা ৪৩২ কোটি ডলার চেয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন।

আমনা বালুচের সাথে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

এদিকে, স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের তথ্য বলছে, চলতি মাসের চার তারিখে পাকিস্তানের রিজার্ভ ছিল ১৫ দশমিক সাত পাঁচ বিলিয়ন বা ১৫৭৫ কোটি ডলার।

অর্থাৎ, বাংলাদেশের দাবি মেটাতে হলে পাকিস্তানকে তাদের রিজার্ভের এক চতুর্থাংশের বেশি ব্যয় করতে হবে।

এছাড়া, এফওসিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নৃশংসতার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ও তুলেছে ঢাকা।

যদিও পাকিস্তানের তরফে এসব ব্যাপারে গণমাধ্যমে কিছু জানানো হয়নি।

দেড় দশকে প্রথম এই ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসি বৈঠকের দিকে চোখ ছিলো অনেকের।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক কখনোই সরলরেখায় চলেনি। তবে, আওয়ামী লীগের গত তিন মেয়াদে একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল।

গত পাঁচই অগাস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা দৃশ্যমান হতে থাকে।

তারই ধারাবাহিকতায় ১৬ই এপ্রিল বুধবার ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ।

কোন কোন অমীমাংসিত ইস্যুর কথা বলেছে ঢাকা?
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের মধ্যে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পূর্ব পাকিস্তান পর্ব থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও সেই ইতিহাস দুই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির ক্ষেত্রে বারবার আলোচনায় এসেছে।

বৃহস্পতিবারের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ইসলামাবাদের সাথে সম্পর্ক জোরদারের জন্য অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান চেয়েছে বাংলাদেশ।

"আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভক্ত সম্পদের সুষম বণ্টন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রেরিত বৈদেশিক সাহায্য তহবিল হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া," এসব বিষয় আলোচনায় ছিল বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন।

তিনি জানান, "বাংলাদেশের আগের একটি হিসাবে ৪০০ কোটি ডলার এবং আরেকটা হিসাবে ৪৩২ কোটি ডলার। এ হিসাব আজকের আলোচনায় বলেছি।"

"বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানী নাগরিকদের যখন অপশন দেওয়া হয়, কেউ কেউ বাংলাদেশে থেকে যেতে চান, কেউ কেউ পাকিস্তানে ফিরে যেতে চেয়েছেন। আটকে পড়া পাকিস্তানীর সংখ্যা তিন লাখ ২৪ হাজার ৪৪৭ জন," যোগ করেন জসিম উদ্দিন।

তিনি বলেন, অমীমাংসিত যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো নিয়ে পাকিস্তান আলোচনায় থাকবে বলে বাংলাদেশকে জানিয়েছে।

'বাংলাদেশ পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে কিনা'
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের এই সফরের ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য নিয়েও কৌতূহল দেখা গেছে।

বাংলাদেশ ভারতের পরিবর্তে পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন বলেন, "বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে, সেটাকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে গেলে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর মীমাংসা করা প্রয়োজন।"

পাকিস্তানের সাথে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এক দেশ থেকে আরেক দেশে মানুষ গেলে সেটাকে ঝোঁকা মনে হয় না। আমরা পাকিস্তানের সাথে যেভাবে এনগেজ হচ্ছি, সেটার ভিত্তি হচ্ছে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক লাভ। আমরা আমাদের লাভের দিকে দেখছি।"

তিনি বলেন, "কূটনীতির কাজ হচ্ছে আমাদের অবস্থানটা তুলে ধরে সেটা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। তারা বলেছে এ বিষয় তারা ভবিষ্যতে আলোচনায় রাখতে চান।"

দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আগামী ২৭ ও ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন।

সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
বাণিজ্য ও ব্যবসার সম্ভাবনা খুঁজে বের করার লক্ষ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।

"কিছু বাধা রয়েছে। আমাদের সেগুলো অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে হবে," বলেন মুহাম্মদ ইউনূস।

অন্যদিকে, আমনা বালুচ বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

তাকে উদ্ধৃত করে বাসসের খবরে বলা হয়েছে "আমাদের নিজেদের মধ্যে বিশাল আঞ্চলিক বাজার রয়েছে। আমাদের এটি কাজে লাগানো উচিত।"

"আমরা প্রতিবারই সুযোগ হারাতে পারি না," যোগ করেন মিজ বালুচ।

সূত্র: © BBC Bangla

উপরে