প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৯:৪৯
Al Jazeera Report

বিদেশে ৮ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি সাবেক ভূমিমন্ত্রীর। শত শত বাড়ির সন্ধান

যুক্তরাজ্যেই ৩৬০ টির বেশী বিলাশবহুল বাড়ি, এছাড়া দুবাই, নিউ ইয়র্ক, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াতেও ছড়িয়ে রয়েছে তার সম্রাজ্য
চাঁদনী ডিজিটাল ডেস্কঃ
বিদেশে ৮ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি সাবেক ভূমিমন্ত্রীর। শত শত বাড়ির সন্ধান
বুধবার প্রচারিত হয়েছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনট ‘দ্য মিনিস্টার’স মিলিয়নস’। ছবি: আল জাজিরা আই ইউনিট

বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকশ’ বিলাসবহুল বাড়ির সন্ধান মিলেছে। নির্বাচনী হলফ নামা অথবা বাংলাদেশের কর কর্তৃপক্ষ কারো কাছেই তিনি এই সম্পদের কথা প্রকাশ কিংবা ঘোষণা করেননি। ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী ইউনিটের তৈরি ‘দ্য মিনিস্টার’স মিলিয়নস’ নামে একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর লন্ডন, দুবাই ও নিউ ইয়র্কে কয়েকশ’ বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। শুধু যুক্তরাজ্যেই তার রয়েছে ৩৬০ বেশি বিলাশবহুল বাড়ি।

আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিটের এই গোপন অনুসন্ধানে প্রকাশ হয়েছে, কীভাবে বাংলাদেশের সাবেক এই মন্ত্রী সরকারিভাবে সীমিত বেতন থেকে ৫০ কোটি ডলারের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।

বাংলাদেশে কঠোর মুদ্রা আইন অনুযায়ী, বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে স্থানান্তর করা নিষিদ্ধ। সেই সঙ্গে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী মন্ত্রীরা সরাসরি ব্যবসায়িক স্বার্থে লাভবান হতে পারেন না বা পরিচালকের পদে থাকতে পারেন না।

আল জাজিরা জানায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ব্রিটেনে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ৩৬০টিরও বেশি বিলাসবহুল সম্পত্তি কিনেছেন। তার এই সম্পত্তি ব্রিটেনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি-দুবাই, নিউ ইয়র্ক, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াতেও ছড়িয়ে আছে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী তার শক্তিশালী রাজনৈতিক সংযোগ নিয়ে গর্ব করে আল জাজিরাকে বলেছেন, আমার বাবা শেখ হাসিনার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং আমিও। তিনি আমার বস... তিনি জানেন যে আমি ব্রিটেনে ব্যবসা করছি।

২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে কোম্পানি গড়ে তোলার পর দেশটিতে তার সম্পত্তি কেনার গতি বৃদ্ধি পায়। ২০১৯ সালে মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর এই গতি আরও বেড়ে যায়।

জুলাই মাসে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন চালানোর পর শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ আগের সরকারের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য দেশ ছেড়েছেন।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ওঠা অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশ সরকার। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করা হয়েছে এবং আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত রাখতে তার পরিবার-পরিচালিত ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল)-এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে।

আলজাজিরার তথ্য মতে, গত বছর বিনিয়োগকারীর ছদ্মবেশে সাইফুজ্জামানের ১৪ মিলিয়ন ডলারের বাড়িতে যান তাদের প্রতিবেদক। ওই সময় ‘ছদ্মবেশী’ প্রতিবেদকদের সাইফুজ্জামান বড়াই করে জানান, তিনি কুমিরের চামড়ার হাতে তৈরি জুতার ওপর হাজার হাজার ডলার খরচ করেন এবং লন্ডনের সবচেয়ে দামি দোকান থেকে ইতালিয়ান স্যুট বানিয়ে পরেন।

এছাড়া ওই সময় লন্ডনের নিজের বাড়িও ঘুরিয়ে দেখান সাইফুজ্জামান। যে বাড়িতে রয়েছে সিনেমা হল, জিম, ব্যক্তিগত এলিভেটর এবং নতুন রোলস রয়েলস গাড়ি রাখার নিরাপদ আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং এরিয়া।

সাইফুজ্জামান আলজাজিরার কাছে দাবি করেছেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব আমিরাতে নিজের বৈধ ব্যবসার মাধ্যমে এই সম্পদ কিনেছেন তিনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার তার বিরুদ্ধে এখন অর্থপাচারের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ এবং তার পরিবারের মালিকানাধীন ইউসিবিএল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এছাড়া ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান তখন সাইফুজ্জামানও দেশে ছেড়ে চলে যান।

এদিকে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এর রিপোর্টে জানা যায়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীদের সম্পদের বিবরণ জানাতে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। 

 

উপরে