প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ সংকট সমাধানের পরিবর্তে নতুন সংকট সৃষ্টি করবে: ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা
ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন যে প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে দেওয়া সাম্প্রতিক ভাষণে দেশের চলমান সংকট–নৈরাজ্য দূরীকরণের কোনো রূপরেখা নেই। বরং ভাষণটি নতুন সংকটের জন্ম দেবে বলেই তারা মনে করেন।
গতকাল ১৩ নভেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ পর্যালোচনা করতে আজ ১৪ নভেম্বর সকাল ১১টায় কমরেড আ. ফ. ম. মাহবুবুল হক মিলনায়তনে মোর্চার এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মোর্চার সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী।
বৈঠকে আরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন—
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশীদ ভূঁইয়া,
গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন আহম্মদ নাসু,
বাংলাদেশের সোস্যালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম।
এ ছাড়া অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহিনউদ্দিন চৌধুরী লিটন প্রমুখ।
“ভাষণে বিভ্রান্তি, পক্ষপাত এবং অগণতান্ত্রিক প্রবণতা” — নেতৃবৃন্দ
নেতৃবৃন্দ বলেন, ভাষণে উপদেষ্টা পরিষ্কারভাবে ঐক্যমত্য কমিশনের পক্ষ সমর্থন করেছেন, যা পক্ষপাতমূলক ও বিভ্রান্তিকর। কৃষি, শ্রম, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে চলমান সংকট সমাধানে সরকারের কোনো উদ্যোগই নেই বলেও তারা মন্তব্য করেন।
নারী ও শ্রম সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়েও কোনো আলোচনা না থাকায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের ভাষায়, “বুর্জোয়া গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ক্ষমতার পালাবদল নির্বিঘ্ন করতে কমিশন গঠন করে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। দেশের মানুষকে অন্ধকারে রেখে গণভোটের মাধ্যমে সেই পরিকল্পনা চাপিয়ে দেওয়া হবে—এটি জাতির সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।”
নেতারা আরও বলেন, গণভোট নিয়ে যেসব জটিল ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে, তা সাধারণ মানুষের জন্য বোধগম্য নয়; এতে জনমত প্রকৃতভাবে প্রতিফলিত হওয়া সম্ভব নয়। এর মাধ্যমে একদিকে বিপুল অর্থ অপচয় হবে, অন্যদিকে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ভুল পথে নিয়ে যাওয়া হবে।
“পিআর পদ্ধতি মানে আরও একশ লুটেরা তৈরির ব্যবস্থা”
নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রস্তাবিত পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের উদ্যোগ দেশে আরও একশ লুটেরা তৈরির পথ খুলে দেবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল—
চব্বিশের অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যাকারীদের বিচার,
বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরে আনা,
ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করা,
বিচার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা,
অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং
সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর সঙ্গে অসম, মেগা ও গোপন চুক্তি বাতিল করা।
নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, প্রধান উপদেষ্টা এসব বিষয়ে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বরং অতীতের ফ্যাসিস্টদের পথ অনুসরণ করেছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইজারা নিয়ে উদ্বেগ
বৈঠকে বলা হয়, বন্দর ইজারা দেওয়ার বিরুদ্ধে শ্রমিক ও জনগণের আন্দোলন চলমান থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রামের পতেঙ্গা লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল ডেনমার্কের রেজিস্ট্রাড মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি (এনপিএস)-এর কাছে ৩০ বছরের জন্য লিজ দেওয়ার ঘোষণা দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত।
